এখনো বন্ধ হয়নি দৌলতপুরের মেলার নামে অবৈধ লটারি বানিজ্য, সর্বস্বান্ত সাধারণ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার আরাফাত হোসেন

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মেলার নামে অবৈধ র‌্যাফেল ড্রয়ের আয়োজন করেছে। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ নানা রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে র‍্যাফেল ড্রয়ের টিকিট।

লোভে পড়ে গ্রামের নিরীহ মানুষজন কিনছেন এসব টিকিট। মেলার আয়োজক ও র‌্যাফেল ড্র সংশ্লিষ্টরা এভাবে প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) জেলার দৌলতপুর উপজেলার শীতলাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে মেলা শুরু হয়। এরপর থেকে শুরু হয়েছে টিকিট বিক্রি। মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি যুবলীগ নেতা বখতিয়ার রহমান বাচ্চু। দুই উপজেলায় শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ আয়োজিত বিজয় মেলাটি চলবে মাসব্যাপী।

এদিকে আয়োজক কমিটির এসব লোভনীয় প্রস্তাবে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এসব কারণে এলাকায় চুরি ও অন্যায়-অত্যাচার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

তবে প্রশাসন বিজয় মেলার অনুমোদন দিলেও লটারি বা র‌্যাফল ড্রয়ের অনুমোদন দেয়নি। অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন।

জানা গেছে, দৌলতপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় মেলা বসেছে। মেলার মাঠে র‌্যাফল ড্রয়ের মঞ্চে সাজিয়ে রাখা হয়েছে টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেলসহ নানা রকম পুরস্কার। মেলার মাঠে মাইকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এই মঞ্চের সামনেই টেবিল-চেয়ার পেতে লটারি বিক্রি করছেন একাধিক লটারি বিক্রেতা। এখান থেকে লটারি কিনছে শিক্ষার্থী, শিশুসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

এছাড়াও শতাধিক গাড়িতে ৩০০-৪০০টি করে টিকেট নিয়ে দৌলতপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করছে লটারি। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লটারি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এতে সর্বশান্ত হচ্ছেন অনেকেই।

এদিকে, শেখ রাসেল স্পোর্টিং ক্লাব বিজয় মেলার নামে লটারি জুয়া চলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এলাকাবাসীর মাঝে। মেলার নামে লটারি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। এসব লটারি-বাণিজ্য বন্ধ না হলে যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মেলার নামে চলছে অবৈধ লটারি। রাজনৈতিক দলের নেতারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জুয়া ও অশ্লীল নৃত্যের প্রস্তুতি চলছে। দ্রুত এসব বন্ধ করা না হলে মানুষ ক্ষতির শিকার হবে। যুবসমাজ নষ্ট হবে। এলাকায় চুরিচামারি বাড়বে।

স্থানীয়রা আরও জানান, মেলা উদ্বোধনের পরদিন থেকেই শুরু হয় লটারির টিকেট বিক্রি। মেলার গেট ছাড়াও শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চেয়ার টেবিল বসিয়ে ২০ টাকা মূল্যের লটারির টিকেট বিক্রি শুরু করেছেন। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অটোরিকশা যোগে ঘুরে ঘুরে লটারির টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। সারাদিন টিকেট বিক্রি শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মেলা চত্বরে লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হয়।

মোটরসাইকেল,প্রাইভেটকারসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার ঘোষণা করায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন টিকেট কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। রিকশা চালক ছাড়াও দিনমজুর শ্রেণির লোকজন যা আয় করছেন সেই টাকায় বাড়ির বাজার না করে লটারির টিকেট কিনে বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেকেই মোটরসাইকেল পুরস্কার পাওয়ার আশায় লোভ সামলাতে না পেরে অবৈধ এই লটারী জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন।

দৌলতপুরের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি যুবলীগ নেতা বখতিয়ার রহমান বাচ্চু বলেন, বিজয়ের মাসে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও আমরা সঠিক সময়ে সেটি পারিনি, অবশেষে শুরু হয়েছে, সুশৃঙ্খল ভাবে চলছে এবং ইতোমধ্যে জমে উঠেছে। নাগরদোলা, সার্কাস,জাদু, র‍্যাফেল ড্র সহ বসেছে হরেক রকমের খাবার ও খেলনার দোকান।

এবিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, মেলায় অবৈধভাবে কোনো কিছুর আয়োজন করছে কি-না তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। র‌্যাফল ড্র চালানোর কোনো অনুমোদন নেই। অবৈধভাবে কোনো কিছু করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল জব্বার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টি গুরত্বের সাথে দেখছি। এব্যাপারে ওসির সাথে কথা হয়েছে। মেলার নামে অবৈধ কিছু মেনে নেয়া হবেনা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মেলার আয়োজকরা আমাদের ইমেজ নষ্ট করতে পারে না। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *