
স্টাফ রিপোর্টার আরাফাত হোসেন
কুষ্টিয়া কুমারখালি উপজেলার সদকী ইউনিয়নের জিলাপিতলা হিজলাকর চরের ফসলি কৃষি জমি ধ্বংস করে ইট ভাটা বিক্রি করা হচ্ছে মাটি । সেই মাটি কাটা বন্ধ করলেন সদকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজুন আবেদিন দ্বীপ। মাটি কাটার ফলে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি বিনষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ইউনিয়নের এল আর বি ভাটায় বন উজার করে ইটভাটায় পুরানো হচ্ছে কাঠ যার ফলে ইট ভাটার কালো ধোঁয়া ও পোড়া কয়লার বর্জ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩-এর ৮(১)(ঘ) তে বলা আছে, কৃষি জমিতে কোন ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না। শুধু তা-ই নয়, ওই আইনের ৩(ক) তে বলা হয়েছে নির্ধারিত সীমারেখার (ফসলি জমি) এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোন ইট ভাটা করা যাবে না। কিন্তু উপজেলায় সদকী ইউনিয়নের এল আর বি ইট ব্রিকস সব নিয়মের বাইরে।
এই ইট ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন ছাড়পত্র । নেওয়া হয়নি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সদকী ইউনিয়নের হিজলাকর চরের ফসলি জমির মাটি নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় মাটি খেকো ও তার সক্রিয় সদস্যরা। এই সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাটি কাটাতে বাঁধা দেয়।
এ সময় পাশের ক্ষেতের মালিক মানিক বলেন, ‘এখান থেকে মাটি কেটে নিলে আমার ক্ষেত ধ্বসে পড়বে। তাছাড়া সারা দিন ট্রাক আসা যাওয়ায় জমির ক্ষতি হচ্ছে। সামনে দেখেন মধ্য মাঠে কি বিশাল পুকুর কাটছে। চেয়ারম্যান সাহেব এসে মাটি কাটা বন্ধ করেছে। আমরা মাটি কাটতে নিষেধ করলে, তারা কারও কোন কথা শুনে না।’
আরেক জমির মালিক আব্বাস শেখ জানান, নানা কৌশলে কৃষকদের কাছ থেকে এসব মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার মাটি বিক্রিতে অনীহা প্রকাশ করলে অসহায় কৃষকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এতে করে কমছে জমির পরিমাণ। মাটি কাটার ফলে জমির উর্বরতা হ্রাসসহ ফসলি জমি বিনষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে, জমির মাটি আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের দানবীর চাকায় পিষ্ট হচ্ছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট। সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রকার সুযোগ সুবিধা নিয়ে ইট ভাটার মালিকরা নির্বিঘ্নে তাদের এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের, অন্যদিকে দীর্ঘ সময় থেকে সংস্কার না হওয়া উপজেলার রাস্তাঘাটগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
একাধিক কৃষিবিদ বলছেন, যেকোনো ফলনযোগ্য জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ছয় থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। এটাই টপ সয়েল বা প্রাণমাটি। এলাকাভেদে জৈবিক প্রক্রিয়ায় টপ সয়েল তৈরিতে ১০০ থেকে ৫০০ বছর সময় লেগে যায়। মাটির এই অংশেই ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। বীজ প্রয়োজনীয় জীবনীশক্তি বা বাঁচার ও বিকাশের উপাদান গ্রহণ করে টপ সয়েল থেকে। এই অংশ একবার কেটে নিলে জমিতে প্রাণ থাকে না। জমি পঙ্গু হয়ে যায়। এমন একটা মূল্যবান মাটির স্তর আমরা শেষ করে দিচ্ছি। দেশের সব কৃষিবিদ, কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানাযায়, ফসলি জমির উপরিভাগের ছয় থেকে আট ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলি জমির মাটি কাটা তাই বেআইনি।’
সদকী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিনহাজুল আবেদিন দ্বীপ বলেন, হিজলাকর চরে ফসলি জমি কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছিল মাটি। এমন সংবাদের ভিওিতে আমি মাটি কাটা বন্ধ করতে বলেছি। এই মাটি কাটার ফলে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, সেই সঙ্গে রাস্তাঘাটগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
উপজেলা সহকারি (ভূমি) কর্মকর্তা মোঃ আমরুল আরাফাত বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি তদন্ত করে প্রোয়জনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেসব ইটভাটাই কাঠ পোড়ানো হচ্ছে, সেই সব ইটভাটায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।