শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের চিরবিদায়।

রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং সামরিক শবমিছিলের মাধ্যমে জাতি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথকে চূড়ান্ত বিদায় জানিয়েছে। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে প্রার্থনা সভায় রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রাজপরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগদান করেন বিশ্বনেতা ও বিদেশি অতিথিরা।

রানির কফিন সমাহিত করার জন্য উইন্ডসরে নেওয়ার সময় কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ওয়েস্টমিনস্টারের ডিন রানির ‍‍`আজীবন কর্তব্যবোধের‍‍` প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতার শেষ ও ১১তম দিনে ওয়েস্টমিনস্টার হলে রানিকে সারিবদ্ধভাবে জনসাধারণের চূড়ান্ত শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দিনটি শুরু হয়েছিল।

এরপরে রাজকীয় নৌবাহিনীর স্টেট গান ক্যারেজের ১৪২ জন নাবিক শোকমিছিলের মাধ্যমে রানির কফিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নিয়ে যায়। এ সময় রাজা তৃতীয় চার্লস, তার ভাইবোন, প্রিন্সেস অ্যান এবং প্রিন্সেস অ্যান্ড্রু এবং এডওয়ার্ডের পেছন পেছন হেঁটে আসেন। এছাড়া প্রিন্স অফ ওয়েলস এবং সাসেক্সের ডিউক, সামরিক বাহিনীর সব অংশের প্রতিনিধিরা সারিবদ্ধভাবে একটি পথ ধরে পেছনে ছিলেন।

শেষকৃত্যের মিছিলটি অ্যাবেতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব নেতারা, রাজনীতিবিদ এবং বিদেশি রাজকীয় অতিথিরা দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর রানির কফিনটি নির্দিষ্ট বেদিতে স্থাপন করা হয়। সে সময় পরিবারের কিছু কনিষ্ঠ সদস্য অ্যাবেতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে রানির নাতি-নাতনি প্রিন্স জর্জ এবং প্রিন্সেস শার্লট তাদের পিতামাতার সঙ্গে বসেছিল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং তার স্বামী হিউ ও‍‍`ল্যারি, মন্ত্রিসভার সদস্যদের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের বেঁচে থাকা সব সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

প্রায় ১০০ জন রাষ্ট্র এবং সরকারপ্রধান অ্যাবেতে প্রার্থনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল, চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এতে ইউরোপের রাজকীয় পরিবারগুলো দৃঢ়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এরমধ্যে ডেনমার্ক, স্পেন, সুইডেন, নরওয়ে, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসের রাজা-রানিদের রয়েছেন। এখন ইউরোপের দীর্ঘতম রাজত্বকারী ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মার্গ্রেথ কফিনের কাছে রাজা চার্লসের বিপরীতে বসেছিলেন। মালয়েশিয়ার রাজা-রানি, জর্ডানের রানি রানিয়াসহ অন্যান্য বিদেশি রাজপরিবারের পাশাপাশি জাপানের সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীও উপস্থিত ছিলেন।

ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে রানির নিজের ব্যক্তিগত ইতিহাসের কিছু অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানে তিনি বিয়ে করেছিলেন এবং এখানেই তার রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। অ্যাবের আনুষ্ঠানিকতা শেষের দিকে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংগীতশিল্পীরা সর্বশেষ গানটি বাজান। এরপর জাতি দুই মিনিটের নীরবতার জন্য স্থবির হয়ে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে যুক্তরাজ্য ও বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। ১৯৬৫ সালে স্যার উইনস্টন চার্চিলের পর এটিই প্রথম রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরে রানির কফিনটি গান ক্যারেজে করে ওয়েলিংটন আর্চে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরে উইন্ডসর ক্যাসেলে তার চূড়ান্ত যাত্রা এবং তাকে সমাহিত করার প্রস্তুতি শুরু হয়। পুরো পথজুড়ে হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ রানিকে তাদের নিজস্ব আবেগ জড়ানো বিদায় জানানোর জন্য সারিবদ্ধ হয়েছিল।

এভাবে কফিনটি লন্ডন থেকে উইন্ডসর পর্যন্ত ২৮ মাইল পথ নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যান্টারবারির আর্চবিশপের আশীর্বাদে উইন্ডসরের ডিন ডেভিড কনার সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এরপর কফিন বেদিতে রাখার আগে রাজমুকুট, রাজদণ্ড সরিয়ে ফেলা হয়, যা রানির রাজত্বের অবসানের প্রতীক। রাজা চার্লস তখন কফিনের ওপর একটি ছোট রেজিমেন্টাল পতাকা স্থাপন করেন। এরপর কফিনটি রাজকীয় ভল্টে নামানো হয়।

রাজপরিবারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, রানিকে সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের অভ্যন্তরে অবস্থিত রাজা ষষ্ঠ জর্জ মেমোরিয়াল চ্যাপেলে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সোমবার রাতে তার স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।

প্রিন্স ফিলিপ ১৭ মাস আগে মারা গেলে তার কফিনটি সেন্ট জর্জের রয়্যাল ভল্টে সমাহিত করা হয়েছিল। রানির বাবা-মা ও বোন প্রিন্সেস মার্গারেটকেও ভল্টে সমাহিত করা হয়েছে।

অন্যান্য দিনের মতো সমাহিত করার অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়নি। প্রাসাদের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আগেই বলেছিলেন, এটি সম্পূর্ণ ঘরোয়াভাবে হবে, কারণ এটি ভীষণ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অনুষ্ঠান। সূত্র : বিবিসি

You May Also Like

One thought on “শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের চিরবিদায়।

  1. You really make it seem so easy with your presentation but
    I find this matter to be really something which I think I would
    never understand. It seems too complicated and very broad for me.
    I’m looking forward for your next post, I will try to get
    the hang of it!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *